ব ঙ্গ বী র কা দে র সি দ্দি কী বী র উ ত্ত ম

বানরের হাতে খোন্তা থাকলে যেমন হয় আমাদেরও তেমন হয়েছে। কারও কোনো মান মর্যাদার লেশমাত্র নেই। যারা মারে আর যারা মার খায় উভয়েরই একই অবস্থা। চারদিকে এক অরাজক বিশৃঙ্খলায় ভরা। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘আমি শিশু বানাই কাউকে কাউকে আয়ু দেই। শিশুকালে যেমন অবুঝ অসহায় থাকে, অন্যের সাহায্য ছাড়া চলতে পারে না, বয়সীদেরও এক সময় অমন অসহায় অবুঝ করি।’ জানি না আমাদের সমাজ, সংসার, আমাদের সরকারের তেমন হয়েছে কিনা। তা না হলে সর্বক্ষেত্রে এমন হবে কেন? স্বাধীনতা বা মুক্তিযুদ্ধের এতগুলো বছর পরও কেন আমরা পাকিস্তানি হানাদারদের পাক হানাদার, পাক বাহিনী বলে ডাকব? আমার বড় মেয়ে কুড়িমণির যখন ৩-৪ বছর বয়স, তখন সখীপুরের কালিয়ানের ঘাওগাচালায় বিদ্যুত্, রাস্তা কিছুই ছিল না, বড় কষ্ট করে যেতে হতো। নির্মাণ কাজ চলছিল, তাই তখনও আমাদের বাড়িতে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা ছিল না। পাশের বাড়িতে একবার দুপুরের খাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছিল। দীপ, কুড়ি আমাদের দু’জনের মাঝে বসে খাচ্ছিল। গ্রামের হিন্দু বাড়ির রান্না এমনিতেই কিছুটা আলাদা। তাছাড়া শ্রী সুরেশ চন্দ্র সরকারের স্ত্রী খুবই সংসারী মানুষ, আমাকে ভীষণ সম্মান করে। এসব কারণে আয়োজন ছিল বিস্তর। ছেলে-মেয়েরা বেশ আনন্দ করে খাচ্ছিল। মুরগির মাংসে একটু বেশি ঝাল ছিল যা আমাদের জন্যও বেশি। পুতুলের মতো আমাদের ছোট ছোট বাচ্চাদের চোখ-মুখ লাল হয়ে কপাল ঘেমে গাল দিয়ে পানি পড়ছিল। ওদের মা এবং আমি বার বার মুছে দিচ্ছিলাম। আমি গামছা দিয়ে আর ওদের মা তার আঁচল দিয়ে। এ রকম এক সময় কুড়িমণি আচমকা বলে উঠল, ‘আম্মু, আম্মু, কী মিষ্টি ঝাল।’ কুড়ির অভিব্যক্তি শুনে বিস্মিত হয়ে গিয়েছিলাম। পরে বুঝলাম ‘ও’ কী বলতে চাচ্ছে। ‘ও’ বোঝাতে চাচ্ছে ঝালে মুখ পুড়ে গেলেও খাবারটা খুব মজার হয়েছে। তাই বলেছে, ‘আম্মু, আম্মু, কী মিষ্টি ঝাল।’ আমাদেরও কি তেমন হয়েছে? ‘ও’তো ছিল অবুঝ শিশু। ৩-৪ বছর বয়স। খাবার স্বাদ লাগায় ঝালকে মিষ্টি বলেছিল। আমরাও কি তেমন বোধশক্তিহীন অবুঝের মতো বলছি কী মহান পাকবাহিনী, পূত-পবিত্র লুটতরাজ, খুন-খারাপি, হত্যা, নারী ধর্ষণ! তা না হলে তাদের পূত-পবিত্র করতে অমন করে নিজের খেয়ে পাকবাহিনী, পাক হানাদার বলতে যাব কেন? একদিকে হানাদার আবার অন্যদিকে হানাদার বাহিনীর নামের আগে শর্টকাট করে পাকিস্তানের স্থলে পাক বসিয়ে নাপাকদের পূত-পবিত্র করার অশুভ অপচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে বহুদিন। হানাদার তো অত্যাচারী, হানাদার তো দখলকারী, হানাদার, লুটকারী, ধর্ষক সেই অর্থে নাপাককে পাক পবিত্র বলতে যাব কেন? খাদ্যের আগে ‘অ’ অখাদ্য, বিচারের আগে ‘অ’ অবিচার, শিক্ষার আগে ‘অ’ অশিক্ষা, রুচির আগে ‘অ’ বসালে যদি অরুচি হয়। তাহলে অত্যাচারী পাকিস্তান হানাদারের আগে পাক বসিয়ে জাতিকে এমন বিভ্রান্ত করার চেষ্টা কেন? কোনো ভালো জিনিসের যদি শুধু একটা ‘অ’-এর কারণে খারাপ মানে হয়ে যায়, খারাপ জিনিসকেও ভালো শব্দ দিয়ে পাক ও পবিত্র করার চেষ্টা করা যায় না? নিশ্চয়ই যায়। মনে হয় এতকাল তাই করা হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। পাকের অর্থ যদি পূত-পবিত্র হয় তাহলে আর কিছু বছর এভাবে চললে ভাবীকালে পাকিস্তান হানাদারদের আর কেউ খারাপ বলবে না। তাদের নামের আগে পাক, কাজের আগে পাক থাকলে তারা নাপাক হয় কী করে? শুধু নামের কারণে এক সময় তারা হয়তো পাক পবিত্র হয়ে যাবে। ৪-৫ দিন আগে হঠাত্ সুনীল কুমার গুহের একটা বই পড়ে অবাক হলাম। মনে হলো আমাদের কপাল খারাপ। হানাদারদের কপাল আদতেই ভালো। পশ্চিমবঙ্গের সুসাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহর কাকা সুনীল কুমার গুহের বঙ্গবীর বাঘা সিদ্দিকী নামে লেখা বইটির কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। সেই ’৭৩-এ লেখা বইতেও নানা জায়গায় ‘পাকবাহিনী’ ‘পাকবাহিনী’ রয়েছে। এ কী করে সম্ভব, ভেবেই পাই না। তবে কি আমার ছোট্ট মেয়ের ‘কী মিষ্টি ঝালের’ মতো। এ যেন হারামজাদা পাক হানাদার! জানি না আমাদের জীবদ্দশায় শিক্ষিত বাঙালির এ ভ্রম কাটবে কিনা? কত সাহিত্যিক, সাংবাদিক, নাট্যকার এখনও হানাদারদের পাক হানাদার, পাকবাহিনী বলে নাটক রচনা করে ভীষণ খ্যাতি অর্জন করেছেন। সারা জাতির মাথায় যদি পচন ধরে রাজনৈতিক পিতাহারা একজন এতিম একা একা কিইবা করতে পারি? মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি কখনও একা কিছু করিনি, করতেও পারিনি। দিশেহারা হাবুডুবু খাওয়া দেশবাসীর সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে ছিলাম। বলেছিলাম, ‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী, ভয় নাই ওরে ভয় নাই। নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।’ শত শত হাজার হাজার দেশপ্রেমিক কাতারবন্দী হয়ে নিজেরাই কাদেরিয়া বাহিনী গঠনের মধ্য দিয়ে এক মহাবিজয় অর্জন করেছিল। আজ চেতনাহীন, আত্মমর্যাদাহীন জাতির জন্য কিইবা করতে পারি? বয়স হয়েছে, আজ জীবন গেলে কোনো দুঃখ হবে না। কিন্তু কীভাবে জীবন দেব অন্ধকারে পথ খুঁজে পাচ্ছি না। শুধু শুধু কবি নজরুলের বাণী বার বার মনে পড়ছে, ‘গঙ্গায় ডুবিয়াছে হায় ভারতের দিবাকর, উদিবে সে রবি আমাদের খুনে রাঙিয়া পুনর্বার।’ জানিনা সেখানে আমার খুন বা রক্তের আদৌ প্রয়োজন হবে কিনা!
সে যে কী নিদারুণ নির্বোধ, লাগামহীন প্রশাসনের যাঁতাকলে আমরা দিবারাত্রি নিষ্পেষিত তা বলার মতো নয়। মাত্র ক’দিন আগে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বললেন, ‘সাংবাদিকরা পুলিশ থেকে দূরে থাকুন।’ ছেলেবেলায় ধনবানের দরজায় দেখতাম ‘কুকুর হইতে সাবধান’। ছোট্ট মন্ত্রী সেটাই কি মিন করেছেন? পুলিশ বাহিনী এক হিংস্র জীব, তাদের থেকে দূরে থাকুন। সভ্য সমাজে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় পুলিশ জনগণের প্রধান আশ্রয় তারপর বিচার বিভাগ। সেই পুলিশ হতে সাবধান হতে হবে কেন? দূরে থাকব কেন? এ দিয়ে তারা কি তাদের অযোগ্যতা ঢাকতে চান? নিশ্চয়ই আমরা কোনো একজন পুলিশকে অসভ্য বলতে পারি। ব্যক্তিগত পর্যায়ে যে কোনো পুলিশ খুনি, ধর্ষক, লুটেরা হতে পারে, কিন্তু সমগ্র পুলিশ বাহিনী নয়। সমগ্র পুলিশের উপর দোষ চাপালে অথবা সত্যিই যদি তারা তেমন রোগাক্রান্ত হয় তাহলে পুরো সমাজই অচল হয়ে পড়বে। আরও বিস্ময়ের ব্যাপার, মাননীয় মন্ত্রীর মন্তব্যের প্রায় এক সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও না মন্ত্রী পদত্যাগ করলেন, না এমন অপমানজনক বিশেষণে বিশেষিত করায় একজন পুলিশ এ নিয়ে উচ্চবাচ্য করল। কেন যেন সবার বোধশক্তি একেবারে ভোঁতা হয়ে গেছে। কোনোকিছু কাউকে স্পর্শ করে না। ক’দিন আগে কুমারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির আগের চাইতে অনেক উন্নতি হয়েছে।’ সাগর-রুনিকে মেরে ফেলা হলো, কূল-কিনারা হলো না। রাস্তাঘাটে প্রতিদিন দুর্ঘটনায় লোক মারা যায়, প্রতিকার নেই। খুন-খারাপি, হাইজ্যাক লেগেই আছে। রাজনৈতিক হত্যা, গুম, মন্ত্রণালয়ে ঘুষ কেলেঙ্কারি, তারপরেও যদি কেউ উন্নতি মনে করে তাহলে তাকে উটপাখি ছাড়া আর কী বলা যায়? সেদিন আবার বলেছেন, ‘পুলিশের ব্যবহার আগের চাইতে অনেক ভালো হয়েছে’ এবং রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সাংবাদিকদের একত্রিত করে এও বলেছেন, ‘পুলিশের আচার-আচরণ আগের চাইতে যে ভালো হয়েছে সে সার্টিফিকেট অতি অবশ্যই আপনাদের দিতে হবে।’ একজন কুমারী মিনিস্টার বললে আওয়ামী সাংবাদিকরা হয়তো অমন সার্টিফিকেট দিলেও দিতে পারেন। কিন্তু টিভি ফুটেজ এবং ধারণ করা ছবিগুলো এক্ষেত্রে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ ছবি তো মিথ্যা বলতে শিখেনি। কিছুদিন আগে আন্দোলনকারীদের রাস্তায় ফেলে পুলিশ বুট দিয়ে গলা চেপে ছিল। সেদিন যশোরে দু’হাতে গলা টিপে ধরেছে। প্রথম আলোর তিন সাংবাদিককে আচ্ছা রকম পিটিয়েছে। পুরনো ঢাকার আদালত পাড়ায় পুলিশ ক্যান্টিনে তরুণীর শ্লীলতাহানি করতে গেলে তার চিত্কার-চেঁচামেচিতে আইনজীবী, সাংবাদিকরা ছুটে গেলে তাদের মেরে তক্তা বানিয়েছে। এসবকে যদি ভালো আচরণ বলতে হয় তাহলে খারাপ আচরণ বলব কাকে? আর তেমন হলে মাননীয় ছোট মন্ত্রী অমন বলবেন কেন? পুলিশ থেকে সাবধান! কোনটা সত্য? সাধারণ মানুষ বড় সমস্যায় পড়েছে। রক্ষক যদি ভক্ষক হয় তাহলে তো কুমিরের বাচ্চার কোনো উপায় নেই। কী নিদারুণ নির্বুদ্ধিতা। বিএনপি সরকারের পুলিশের নির্যাতনের কথা তুলে ধরতে তার দাঁত ভাঙার উপমা দিয়েছেন। আমরা কেউ জানি না কবে কোনদিন পুলিশের হাতে মাননীয় মন্ত্রীর দাঁত ভেঙেছে। শুনেছিলাম, মন্ত্রী হওয়ার পর পড়ে গিয়ে মাজা ভেঙেছিল। সে সময় দাঁত ভেঙেছিল কিনা তা তো জানি না। তবুও তর্কের খাতিরে যদি মেনেও নেই, মন্ত্রী হয়ে কি এখন আমাদের মাথা ভাঙবেন? তবে কেন ছেলেবেলায় পড়েছিলাম, ‘কুকুরের কাজ কুকুর করেছে, কামড় দিয়েছে পায়। তা বলে কুকুরে কামড়ানো কিরে মানুষের শোভা পায়।’ কত বছর আগে হিংসা, প্রতিহিংসার ব্যাপারে কবি অমন ভাবতে পারলেন, অথচ এই আধুনিক যুগেও আমরা কেন পারছি না। বঙ্গবন্ধু মাঝে মাঝেই বলতেন, ‘চোরা না শুনে ধর্মের কাহিনী।’ জানি মহাজোটের কর্ণধারেরা আমার অনেক কথাই শুনবেন না। কিন্তু তাদের জেনে রাখা উচিত ‘পুরনো চাল ভাতে বাড়ে।’ আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা কারও কাছ থেকে ধার করে আনিনি। তিল তিল শ্রমে-ঘামে অর্জন করেছি। তাই বলছি, ‘সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী কখনও কারও বন্ধু নয়। বিরোধীদের অথবা আন্দোলনকারীদের অত্যাচার করলে, দাঁত কেলিয়ে হাসবেন না, বেশি বগল বাজাবার চেষ্টা করবেন না। সব বিরোধী দল মিলে পুরো এক বছর সংগ্রাম করে সরকারকে যতটা অপ্রিয় করতে পারত তার দশগুণ বেশি অপ্রিয় করে দিয়েছে সেদিন ঢাকা কোর্ট আঙিনায় মেয়েদের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। মনে হতে পারে বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুককে মহাজোটের প্রিয় পুলিশরা নির্যাতন করে ভালো করেছে, প্রমোশনও পেয়েছে কিন্তু সরকারের কতটা বেজেছে তা পরে বোঝা যাবে। মহাজোট তাদের নিজেদের মনে করলেও তারা মহাজোটকে নিজের মনে করে না। নতুন যারা আসবেন তাদের প্রিয় হওয়ার জন্য যা যা করা দরকার সে ট্রেনিং তাদের বহু আগে থেকেই আছে। বাংলাদেশ হওয়ার পর সরকারে সব সময় আওয়ামী বিরোধীরাই থেকেছে, তাই যাদের যেখানে দেয়া হবে উপরে উপরে প্রেমিক মনে হলেও তারা অধিকাংশই বিরোধী। আর দু’চারজন অদক্ষ, যোগ্যতাহীন অপদার্থ প্রেমিক সরকারকে আরও বেশি করে ডুবাতে পারে। একটু চিন্তা করে দেখবেন। কারও কারও অতি তত্পরতা ষড়যন্ত্রের অংশও হতে পারে। একটু ধীরে-সুস্থে ভেবে দেখতে পারেন।
পহেলা জুন প্রেস ক্লাবে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা অন্যায়ভাবে বন্ধের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উদযাপিত হলো। দৈনিক আমার দেশ’র সম্পাদক মাহমুদুর রহমান যথার্থই সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। আদালত অবমাননার অভিযোগে সুপ্রিমকোর্টে এর আগে কেউ নিঃস্বার্থ ক্ষমা প্রার্থনা ছাড়া অভিযোগ অস্বীকার করেনি। তিনিই প্রথম এক বিরাট দুঃসাহসিকতার পরিচয় দিয়ে কারাবরণ করেছেন, নতিস্বীকার করেননি। এটা নৈতিকতার জগতে সাহসী সাংবাদিকতার এক উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে থাকবে। গত দেড় বছর নিয়মিত দৈনিক আমার দেশ’এ লিখি। সে কারণে পত্রিকাটির প্রতি একটা স্বাভাবিক টান অনুভব করি। যদিও ইদানীং দেশ ও সমাজে সৌজন্য অনেকটাই কমে গেছে। দৈনিক পত্রপত্রিকা এমনিতেই সমাজে আলোচিত মানুষদের সৌজন্য সংখ্যা পাঠায়। নিয়মিত লেখক বা সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের জন্য সৌজন্য সংখ্যা পাওয়া একটা নীতিমালার অংশ। অথচ দেড়-পৌনে দুই বছর আমার দেশ এবং অন্যান্য পত্রিকায় লিখলেও এক কপি সৌজন্য সংখ্যা আসে না, কিনেই পড়ি। তারপরও যেহেতু নিয়মিত লিখি। তাই তাদের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। কবি আবদুল হাই শিকদার অসাধারণ উপস্থাপনা করছিলেন। বিকাল সাড়ে চারটায় গিয়ে ছ’টা পর্যন্ত অনেকের বক্তব্য শুনেছি। যদিও পরম শ্রদ্ধেয় ব্যারিস্টার রফিকুল হকের বক্তব্য শুনতে পাইনি। জনাব আতাউস সামাদ এবং রুহুল আমীন গাজী দারুণ সুন্দর বক্তব্য রেখেছেন। বর্তমান স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম প্রসঙ্গ আনতে গিয়ে জনাব আতাউস সামাদ আমার প্রসঙ্গ এনেছিলেন। দু’একজন বক্তা নিশ্চিত হতে চাচ্ছিলেন বর্তমান সরকার সাংবাদিকসহ দেশবাসীর উপর যে নির্যাতন চালাচ্ছে অন্য কেউ এলে সে নির্যাতন চালানো হবে না, পরিবর্তন হবে তার গ্যারান্টি কোথায়? কথাটায় বেশি জোর দিচ্ছিলেন কবি ফরহাদ মজহার। এক পর্যায়ে বিএনপির নেতা, সাবেক আমলা মাননীয় সংসদ সদস্য এম.কে. আনোয়ার জবাব দিতে গিয়ে বললেন, তারা আবার সরকারে গেলে সাংবাদিকরা নির্যাতিত হবেন না, মানুষের উপর জোর-জুলুম হবে না। কেন যেন ভদ্রলোকের সঙ্গে একমত হতে পারলাম না। ১৯৭১-এ জনাব এম. কে. আনোয়ার পাকিস্তানি সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। অন্যদের মতো পাকিস্তানের হুকুম তামিল করেছেন। বাংলাদেশ হলে বাঙালি হয়েছেন। সচিব পদ অলঙ্কিত করে অবসর নেয়ার আগেই রাজনীতিক হয়েছেন। যে পাকিস্তানি পুলিশ, ওসি, ডিসি দিয়ে বঙ্গবন্ধুর মতো বিশাল ব্যক্তিত্বের মানুষ ভালোভাবে দেশ চালাতে পারেননি। যাদের নিয়ে অতীতে চারদলীয় জোট পারেনি, বর্তমান মহাজোট পারছে না, এসব খোলনলচে নিয়ে কীভাবে বিএনপি বা অন্য কেউ ক্ষমতায় গেলেই সুন্দরভাবে চলবে—কেন যেন মন সায় দিতে চায়নি। আমরা জামায়াতে ইসলামের সঙ্গে রাজনীতি করি না। একই মঞ্চে অংশ নেই না। এটা আমাদের কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের দলীয় সিদ্ধান্ত। তাই জামায়াতে ইসলামের এমপি জনাব হামিদুর রহমান আজাদের বক্তৃতার পর আমি অংশ নেইনি। তার মানে এই নয় বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত জামায়াতে ইসলামের কেউ এদেশে থাকবে না বা রাজনীতি করবে না। আমাদের বক্তব্য স্বাধীনতা যুদ্ধে তাদের ভূমিকার জন্য দেশবাসীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা না করা পর্যন্ত বা ক্ষমা না পাওয়া পর্যন্ত তাদের নিয়ে কোনোকিছু ভাবা যায় না। রাজনীতির স্বার্থে অন্যরা যা খুশি করে করুক, তাতে আমাদের মাথাব্যথা নেই।
সে যে কী নিদারুণ নির্বোধ, লাগামহীন প্রশাসনের যাঁতাকলে আমরা দিবারাত্রি নিষ্পেষিত তা বলার মতো নয়। মাত্র ক’দিন আগে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বললেন, ‘সাংবাদিকরা পুলিশ থেকে দূরে থাকুন।’ ছেলেবেলায় ধনবানের দরজায় দেখতাম ‘কুকুর হইতে সাবধান’। ছোট্ট মন্ত্রী সেটাই কি মিন করেছেন? পুলিশ বাহিনী এক হিংস্র জীব, তাদের থেকে দূরে থাকুন। সভ্য সমাজে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় পুলিশ জনগণের প্রধান আশ্রয় তারপর বিচার বিভাগ। সেই পুলিশ হতে সাবধান হতে হবে কেন? দূরে থাকব কেন? এ দিয়ে তারা কি তাদের অযোগ্যতা ঢাকতে চান? নিশ্চয়ই আমরা কোনো একজন পুলিশকে অসভ্য বলতে পারি। ব্যক্তিগত পর্যায়ে যে কোনো পুলিশ খুনি, ধর্ষক, লুটেরা হতে পারে, কিন্তু সমগ্র পুলিশ বাহিনী নয়। সমগ্র পুলিশের উপর দোষ চাপালে অথবা সত্যিই যদি তারা তেমন রোগাক্রান্ত হয় তাহলে পুরো সমাজই অচল হয়ে পড়বে। আরও বিস্ময়ের ব্যাপার, মাননীয় মন্ত্রীর মন্তব্যের প্রায় এক সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও না মন্ত্রী পদত্যাগ করলেন, না এমন অপমানজনক বিশেষণে বিশেষিত করায় একজন পুলিশ এ নিয়ে উচ্চবাচ্য করল। কেন যেন সবার বোধশক্তি একেবারে ভোঁতা হয়ে গেছে। কোনোকিছু কাউকে স্পর্শ করে না। ক’দিন আগে কুমারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির আগের চাইতে অনেক উন্নতি হয়েছে।’ সাগর-রুনিকে মেরে ফেলা হলো, কূল-কিনারা হলো না। রাস্তাঘাটে প্রতিদিন দুর্ঘটনায় লোক মারা যায়, প্রতিকার নেই। খুন-খারাপি, হাইজ্যাক লেগেই আছে। রাজনৈতিক হত্যা, গুম, মন্ত্রণালয়ে ঘুষ কেলেঙ্কারি, তারপরেও যদি কেউ উন্নতি মনে করে তাহলে তাকে উটপাখি ছাড়া আর কী বলা যায়? সেদিন আবার বলেছেন, ‘পুলিশের ব্যবহার আগের চাইতে অনেক ভালো হয়েছে’ এবং রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সাংবাদিকদের একত্রিত করে এও বলেছেন, ‘পুলিশের আচার-আচরণ আগের চাইতে যে ভালো হয়েছে সে সার্টিফিকেট অতি অবশ্যই আপনাদের দিতে হবে।’ একজন কুমারী মিনিস্টার বললে আওয়ামী সাংবাদিকরা হয়তো অমন সার্টিফিকেট দিলেও দিতে পারেন। কিন্তু টিভি ফুটেজ এবং ধারণ করা ছবিগুলো এক্ষেত্রে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ ছবি তো মিথ্যা বলতে শিখেনি। কিছুদিন আগে আন্দোলনকারীদের রাস্তায় ফেলে পুলিশ বুট দিয়ে গলা চেপে ছিল। সেদিন যশোরে দু’হাতে গলা টিপে ধরেছে। প্রথম আলোর তিন সাংবাদিককে আচ্ছা রকম পিটিয়েছে। পুরনো ঢাকার আদালত পাড়ায় পুলিশ ক্যান্টিনে তরুণীর শ্লীলতাহানি করতে গেলে তার চিত্কার-চেঁচামেচিতে আইনজীবী, সাংবাদিকরা ছুটে গেলে তাদের মেরে তক্তা বানিয়েছে। এসবকে যদি ভালো আচরণ বলতে হয় তাহলে খারাপ আচরণ বলব কাকে? আর তেমন হলে মাননীয় ছোট মন্ত্রী অমন বলবেন কেন? পুলিশ থেকে সাবধান! কোনটা সত্য? সাধারণ মানুষ বড় সমস্যায় পড়েছে। রক্ষক যদি ভক্ষক হয় তাহলে তো কুমিরের বাচ্চার কোনো উপায় নেই। কী নিদারুণ নির্বুদ্ধিতা। বিএনপি সরকারের পুলিশের নির্যাতনের কথা তুলে ধরতে তার দাঁত ভাঙার উপমা দিয়েছেন। আমরা কেউ জানি না কবে কোনদিন পুলিশের হাতে মাননীয় মন্ত্রীর দাঁত ভেঙেছে। শুনেছিলাম, মন্ত্রী হওয়ার পর পড়ে গিয়ে মাজা ভেঙেছিল। সে সময় দাঁত ভেঙেছিল কিনা তা তো জানি না। তবুও তর্কের খাতিরে যদি মেনেও নেই, মন্ত্রী হয়ে কি এখন আমাদের মাথা ভাঙবেন? তবে কেন ছেলেবেলায় পড়েছিলাম, ‘কুকুরের কাজ কুকুর করেছে, কামড় দিয়েছে পায়। তা বলে কুকুরে কামড়ানো কিরে মানুষের শোভা পায়।’ কত বছর আগে হিংসা, প্রতিহিংসার ব্যাপারে কবি অমন ভাবতে পারলেন, অথচ এই আধুনিক যুগেও আমরা কেন পারছি না। বঙ্গবন্ধু মাঝে মাঝেই বলতেন, ‘চোরা না শুনে ধর্মের কাহিনী।’ জানি মহাজোটের কর্ণধারেরা আমার অনেক কথাই শুনবেন না। কিন্তু তাদের জেনে রাখা উচিত ‘পুরনো চাল ভাতে বাড়ে।’ আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা কারও কাছ থেকে ধার করে আনিনি। তিল তিল শ্রমে-ঘামে অর্জন করেছি। তাই বলছি, ‘সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী কখনও কারও বন্ধু নয়। বিরোধীদের অথবা আন্দোলনকারীদের অত্যাচার করলে, দাঁত কেলিয়ে হাসবেন না, বেশি বগল বাজাবার চেষ্টা করবেন না। সব বিরোধী দল মিলে পুরো এক বছর সংগ্রাম করে সরকারকে যতটা অপ্রিয় করতে পারত তার দশগুণ বেশি অপ্রিয় করে দিয়েছে সেদিন ঢাকা কোর্ট আঙিনায় মেয়েদের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। মনে হতে পারে বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুককে মহাজোটের প্রিয় পুলিশরা নির্যাতন করে ভালো করেছে, প্রমোশনও পেয়েছে কিন্তু সরকারের কতটা বেজেছে তা পরে বোঝা যাবে। মহাজোট তাদের নিজেদের মনে করলেও তারা মহাজোটকে নিজের মনে করে না। নতুন যারা আসবেন তাদের প্রিয় হওয়ার জন্য যা যা করা দরকার সে ট্রেনিং তাদের বহু আগে থেকেই আছে। বাংলাদেশ হওয়ার পর সরকারে সব সময় আওয়ামী বিরোধীরাই থেকেছে, তাই যাদের যেখানে দেয়া হবে উপরে উপরে প্রেমিক মনে হলেও তারা অধিকাংশই বিরোধী। আর দু’চারজন অদক্ষ, যোগ্যতাহীন অপদার্থ প্রেমিক সরকারকে আরও বেশি করে ডুবাতে পারে। একটু চিন্তা করে দেখবেন। কারও কারও অতি তত্পরতা ষড়যন্ত্রের অংশও হতে পারে। একটু ধীরে-সুস্থে ভেবে দেখতে পারেন।
পহেলা জুন প্রেস ক্লাবে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা অন্যায়ভাবে বন্ধের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উদযাপিত হলো। দৈনিক আমার দেশ’র সম্পাদক মাহমুদুর রহমান যথার্থই সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। আদালত অবমাননার অভিযোগে সুপ্রিমকোর্টে এর আগে কেউ নিঃস্বার্থ ক্ষমা প্রার্থনা ছাড়া অভিযোগ অস্বীকার করেনি। তিনিই প্রথম এক বিরাট দুঃসাহসিকতার পরিচয় দিয়ে কারাবরণ করেছেন, নতিস্বীকার করেননি। এটা নৈতিকতার জগতে সাহসী সাংবাদিকতার এক উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে থাকবে। গত দেড় বছর নিয়মিত দৈনিক আমার দেশ’এ লিখি। সে কারণে পত্রিকাটির প্রতি একটা স্বাভাবিক টান অনুভব করি। যদিও ইদানীং দেশ ও সমাজে সৌজন্য অনেকটাই কমে গেছে। দৈনিক পত্রপত্রিকা এমনিতেই সমাজে আলোচিত মানুষদের সৌজন্য সংখ্যা পাঠায়। নিয়মিত লেখক বা সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের জন্য সৌজন্য সংখ্যা পাওয়া একটা নীতিমালার অংশ। অথচ দেড়-পৌনে দুই বছর আমার দেশ এবং অন্যান্য পত্রিকায় লিখলেও এক কপি সৌজন্য সংখ্যা আসে না, কিনেই পড়ি। তারপরও যেহেতু নিয়মিত লিখি। তাই তাদের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। কবি আবদুল হাই শিকদার অসাধারণ উপস্থাপনা করছিলেন। বিকাল সাড়ে চারটায় গিয়ে ছ’টা পর্যন্ত অনেকের বক্তব্য শুনেছি। যদিও পরম শ্রদ্ধেয় ব্যারিস্টার রফিকুল হকের বক্তব্য শুনতে পাইনি। জনাব আতাউস সামাদ এবং রুহুল আমীন গাজী দারুণ সুন্দর বক্তব্য রেখেছেন। বর্তমান স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম প্রসঙ্গ আনতে গিয়ে জনাব আতাউস সামাদ আমার প্রসঙ্গ এনেছিলেন। দু’একজন বক্তা নিশ্চিত হতে চাচ্ছিলেন বর্তমান সরকার সাংবাদিকসহ দেশবাসীর উপর যে নির্যাতন চালাচ্ছে অন্য কেউ এলে সে নির্যাতন চালানো হবে না, পরিবর্তন হবে তার গ্যারান্টি কোথায়? কথাটায় বেশি জোর দিচ্ছিলেন কবি ফরহাদ মজহার। এক পর্যায়ে বিএনপির নেতা, সাবেক আমলা মাননীয় সংসদ সদস্য এম.কে. আনোয়ার জবাব দিতে গিয়ে বললেন, তারা আবার সরকারে গেলে সাংবাদিকরা নির্যাতিত হবেন না, মানুষের উপর জোর-জুলুম হবে না। কেন যেন ভদ্রলোকের সঙ্গে একমত হতে পারলাম না। ১৯৭১-এ জনাব এম. কে. আনোয়ার পাকিস্তানি সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। অন্যদের মতো পাকিস্তানের হুকুম তামিল করেছেন। বাংলাদেশ হলে বাঙালি হয়েছেন। সচিব পদ অলঙ্কিত করে অবসর নেয়ার আগেই রাজনীতিক হয়েছেন। যে পাকিস্তানি পুলিশ, ওসি, ডিসি দিয়ে বঙ্গবন্ধুর মতো বিশাল ব্যক্তিত্বের মানুষ ভালোভাবে দেশ চালাতে পারেননি। যাদের নিয়ে অতীতে চারদলীয় জোট পারেনি, বর্তমান মহাজোট পারছে না, এসব খোলনলচে নিয়ে কীভাবে বিএনপি বা অন্য কেউ ক্ষমতায় গেলেই সুন্দরভাবে চলবে—কেন যেন মন সায় দিতে চায়নি। আমরা জামায়াতে ইসলামের সঙ্গে রাজনীতি করি না। একই মঞ্চে অংশ নেই না। এটা আমাদের কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের দলীয় সিদ্ধান্ত। তাই জামায়াতে ইসলামের এমপি জনাব হামিদুর রহমান আজাদের বক্তৃতার পর আমি অংশ নেইনি। তার মানে এই নয় বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত জামায়াতে ইসলামের কেউ এদেশে থাকবে না বা রাজনীতি করবে না। আমাদের বক্তব্য স্বাধীনতা যুদ্ধে তাদের ভূমিকার জন্য দেশবাসীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা না করা পর্যন্ত বা ক্ষমা না পাওয়া পর্যন্ত তাদের নিয়ে কোনোকিছু ভাবা যায় না। রাজনীতির স্বার্থে অন্যরা যা খুশি করে করুক, তাতে আমাদের মাথাব্যথা নেই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন